হাইলাকান্দি সরস্বতী বিদ্যা নিকেতনে অনুষ্ঠিত হল বিদ্যাভারতী অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংস্থান এর অন্তর্গত শিক্ষা বিকাশ পরিষদ দক্ষিণ আসাম প্রান্তের বার্ষিক সাধারণ সভা। রবিবার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে বার্ষিক সাধারণ সভার শুভারম্ভ করেন বিদ্যাভারতী পূর্বোত্তর ক্ষেত্রের সম্পাদক ডঃ জগদিন্দ্র রায় চৌধুরী। এদিনের বার্ষিক সাধারণ সভায় পৌরহিত্য করেন শিক্ষা বিকাশ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিখিল ভূষণ দে। পরে অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী বন্দনা ও উদ্বোধনী সংগীত। এতে হাইলাকান্দি সরস্বতী বিদ্যানিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
সভার শুরুতে বিগত দিনে প্রয়াত হওয়া বিদ্যা ভারতীর বিভিন্ন কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়। এরপর প্রথমে বিগত সভার প্রস্তাব পাঠ করে, সম্পাদকের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শিক্ষা বিকাশ পরিষদের সম্পাদক তথা শিলচর এনআইটি-র ডেপুটি রেজিস্ট্রার নীহারেন্দু ধর। এছাড়াও তিনি এদিন দক্ষিণ আসাম প্রান্তে বিদ্যাভারতীর কাজকর্মের বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরেন। আগামী শিক্ষাবর্ষে দক্ষিণ আসামে আরও ছয়টি নতুন বিদ্যালয়ের শুভারম্ভ করা হবে বলে জানান তিনি।
সদ্য প্রকাশিত মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান শিক্ষা বিকাশ পরিষদ পরিচালিত বিদ্যালয়গুলির মাধ্যমিকের ফলাফল ৯৪ শতাংশ যা অতি আশা ব্যঞ্জন। এছাড়াও উধারবন্দের ইস্টামপুরে একটি প্রকল্প বিদ্যালয় সহ করিমগঞ্জে দক্ষিণ আসামে বিদ্যা ভারতীর প্রথম মহাবিদ্যালয় শ্রীভূমি সরস্বতী মহাবিদ্যালয় খোলার কথাও তিনি জানান। সভায় ২০২২-২৩ অর্থ বর্ষের অ্যাকাউন্ট অডিট রিপোর্ট পাঠ ও অনুমোদনের পর ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের বাজেট প্রস্তুত করেন শিক্ষা বিকাশ পরিষদের কোষাধ্যক্ষ তথা ললিত জৈন কমার্স কলেজের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক কুমার দেব। পরে এদিনের সভা সর্বসম্মতিক্রমে আগামী ২০২৩-২৪ বর্ষের বাজেট অনুমোদন করে।
সভার দ্বিতীয় সত্রে বিদ্যাভারতী দক্ষিণ আসাম প্রান্তের মুখপত্র ‘অর্ঘ্য ভারতী’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরে অর্ঘ্য ভারতীর সম্পাদক তথা কর্ণমধু সরস্বতী বিদ্যা নিকেতনের প্রধান আচার্য সমীরণ চক্রবর্তী অর্ঘ্য ভারতী প্রকাশের ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এদিনের সভায় অন্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দক্ষিণ আসাম প্রান্ত কার্যবাহ তথা কাবুগঞ্জ জনতা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র নাথ। তিনি ভারতের নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে বলেন ভারতবর্ষ এক নতুন দিশায় এগোচ্ছে। এখন সময় এসেছে সকল ধরনের গোড়ামীকে মুছে ফেলে সামনে আগাবার। আগামী ২০২৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ১০০ বছর পূর্তি হচ্ছে, এই শতবর্ষপূর্তিকে লক্ষ্য রেখে বিদ্যা ভারতীর কাজকর্ম-কে আরোও বিস্তার লাভ করানোর আহ্বান জানান তিনি।
বিদ্যাভারতী পূর্বোত্তর ক্ষেত্রের সম্পাদক ডঃ জগদিন্দ্র রায় চৌধুরী তাঁর ভাষণে রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ২০২০ এর বাস্তবায়ন সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিদ্যাভারতের অগ্রগতির খতিয়ান তুলে ধরেন। সংগঠনমন্ত্রী মহেশ ভাগবত দক্ষিণ অসম প্রান্তে দিন দিন সংগঠনের কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মত পোষণ করেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নিখিল ভূষণ দে দক্ষিণ আসাম প্রান্তের সকল বিদ্যালয়গুলিকে আরো সক্রিয় করে তুলতে সভায় উপস্থিত বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির কর্মকর্তাদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বিদ্যালয়ের গুলির ক্ষেত্রে আচার্য আচার্যাদের সাশ্রয়ী মানধন প্রদানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সমিতির কর্মকর্তাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সভার শেষে দক্ষিণ অসমে বিদ্যা ভারতীর বিকাশ যাত্রার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শিক্ষা বিকাশ পরিষদের সহ সম্পাদক তথা কাঠলিছড়া এসকে রায় কলেজের এসিস্টেন্ট প্রফেসর ডঃ দেবজিৎ দে। এদিনের সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা বিকাশ পরিষদ দক্ষিণ আসাম প্রান্তের সহ-সভাপতি তথা বিশিষ্ট শিল্পপতি অসিত দত্ত ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অপূর্ব কুমার নাথ, সহ-সম্পাদক তথা করিমগঞ্জ সরস্বতী বিদ্যানিকেতন সিনিয়র সেকেণ্ডারী স্কুলের প্রধান আচার্য অঞ্জন গোস্বামী, ডঃ অনিরুদ্ধ সেন, হাইলাকান্দি এসএস কলেজের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ গোলাব নন্দী, ডঃ যজ্ঞেশ্বর দেব, অর্থনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ রমব্রত চক্রবর্তী, কাটলীছড়া কলেজের অর্থনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ মনিষ রায়, হরকিশোর হাইস্কুলের প্রধানাচার্যা শংকরী চক্রবর্তী ও অধ্যাপিকা কবিতা দাস প্রমুখ।
এদিনের সভায় বিদ্যা ভারতী দক্ষিণ আসাম প্রান্তের অন্তর্গত কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও ডিমাহাসাও জেলার মোট ৪৮ টি বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি সম্পাদক ও প্রধান আচার্যরা অংশগ্রহণ করেন।